হযরত গরীব শাহ (রঃ)
হযরত গরীব শাহ (রঃ) |
কথিত আছে যে, পীর খান জাহান আলী বারোবাজার থেকে মুড়লী অভিমুখে যাত্রা করলে দুই শিষ্যকে অনুচর বর্গের খাদ্য প্রস্তুতের ভার দিয়েছিলেন। যথাসময়ে তাঁরা খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেন নাই। খাদ্য প্রস্তুত করতে না পারা সত্ত্বেও খান জাহান আলী পথিমধ্যে অপেক্ষা ও বিশ্রাম না করে নদীর কূল ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন।
খান জাহান ভৈরব তীরে প্রাচীন মুড়লীতে ইসলাম প্রচার কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। ক্রমে সেটি মুড়লী কসবা নামে পরিচিত হয়। কসবা শব্দের অর্থ শহর। মুড়লী কসবা ছিল সেই সময়কার শহর। গরীব শাহ মানুষকে ইসলামের আদর্শ বুঝিয়ে দিয়ে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতেন। হযরত গরীব শাহ ও হযরত বোরহান শাহের চেষ্টায় পুরনো যশোর ঈশ্বরীপুর মুসলিম অধ্যুষ্যিত স্থানে পরিণত হয়েছিল। আস্তে স্থানটি কসবা নামে পরিচিত হয় এবং তিনি এই কসবার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কথিত আছে যে, তিনি একবার স্রোতবহ ভৈরব নদীকে রাগ করে ভৎসনা করেছিলেন বলে নদীর স্রোত স্থিমিত হয়ে গিয়েছিল। জনসাধারণ আজও বিশ্বাস করে যে, দরবেশের জন্যই নদীতে আজ স্রোত বহে না।
কথিত আছে যে, খান জাহান আলী (রঃ) তাঁর অন্যতম সঙ্গী হযরত গরীব শাহ (রঃ) কে তৎকালীন খরস্রোতা ভৈরব নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেতুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবার পূর্বেই তিনি মারা যান। এই সেতুকে আরবী/ফারসী ভাষায় জসর হয়। আর এ থেকে এলাকার নাম জসর (যশোর) হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
হযরত গরীব শাহ (রঃ) ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দের পঞ্চম পাদের দিকে বাংলায় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। যশোর এর কেন্দ্রস্থল দড়াটানা মোড়ের সামান্য পশ্চিমে পুরাতন কসবা অঞ্চলে ফৌজদারী কোর্টের উত্তরে ভৈরব তীরে ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর সমাধি সৌধ এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের ন্যায় দেখতে। মূল্যবান রঙ্গীন বস্ত্র দ্বারা তাঁর সমাধি সব সময় আবৃত থাকে। ছোট মাযারটি বেশ পরিপাটি ও সুন্দর। সর্বদা ভক্তরা আনাগোনা করে গরীব শাহের নামে সিন্নি মানত করে। লোকে বিশ্বাস করে যে, গরীব শাহ যে মাটিতে শুয়ে আছে সে মাটিতে অত্যাচার সহ্য হয় না।
গরীব শাহের মাযার পর্যন্ত এক কালে স্রোতস্বতী ভৈরব ভেঙ্গে গিয়েছিল। মাযারটি কোন প্রকারে রক্ষা পায়। যশোর জেলার শ্রীপুর থানায় তাঁর প্রকৃত কবর বলে অনেকে দাবী করে। নোহাটার কয়েক ঘর অধিবাসী গরীব শাহের বংশধর বলে দাবী করে। সেখানে প্রবাদ আছে যে, মৃত্যুকালে তিনি তাঁর কবরের উপর কোন স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করতে নিষেধ করে গেছেন। তা সত্য কিনা জানা যায় না। তবে তিনি ভৈরব তীরে ঘুমিয়ে আছেন এটাই সত্য। ইসলাম প্রচারক হিসাবে তিনি আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন। তিনি মরেও অমর। তাঁর কৃতী নিঃশেষ হবে না। তিনি খান জাহানের এদেশীয় না ভিন দেশীয় শিষ্য ছিলেন তা জানা যায় না।