ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেলো বাংলাদেশের।
ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেলো বাংলাদেশের। |
হিসাব কিতাব অনেক ছিল। ভারতের বিপক্ষে শুধু জিতলেই চলতো না, লিগপর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকেও হারাতে হতো। তবেই আসতো পরের হিসেব। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানের হারে চুরমার হলো টাইগারদের সেমির স্বপ্ন।
বিশাল টার্গেট মাথায় নিয়ে শুরু থেকেই রান তুলতে খাবি খাচ্ছিলেন দুই ওপেনার। প্রথম আঘাত হানেন মোহাম্মদ সামী। ২২ রানে তামিমকে বোল্ড করেন। সাকিবের ব্যাট এদিনও হেসেছে। কিন্তু সৌম্যর সঙ্গে জুটিটা বড় হতে দেননি হার্দিক পান্ডিয়া। ৩৩ রানে সৌম্যকে কোহলির তালুবন্দ্বী করান তিনি। মুশফিকের পর লিটন দাস, মোসাদ্দেকও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। ৬৬ রানে সাকিব বিদায় নিলে কোহলির উদযাপন বলে দিচ্ছিলো কেল্লা ফতে। হলোও তাই।
টপ ছয় উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা টাইগারদের মনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি দিয়েছিল সাব্বির রহমান এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ৬৬ রানের জুটি। টাইগারদের ইনিংসের সমাধী রচিত হয়ে যায় শেষ ব্যাটসম্যান সাব্বিরের বিদায়েই।
তবে স্বপ্ন ভঙের ম্যাচে উজ্জ্বল হয়ে আছে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের লড়াকু ফিফটি। কিন্তু শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াইটা টানতে পারলেন যোগ্য সঙ্গীর অভাবে। তার আগেই জসপ্রিত বুজরাহ তুলে নিলেন রুবেল আর মোস্তাফিজকে।
বল হাতে ৪ উইকেট তুলে নেন বুমরাহ। ৩টি উইকেট শিকার করেন জসপ্রিত বুমরাহ। এছাড়া একটি করে উইকেট তুলে নেন ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামী এবং জুজবেন্দ্র চাহাল।
এজবাস্টনে এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩১৪ রান করে ভারত। অধিনায়কের আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করেন দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল এবং রহিত শর্মা। তারা গড়েন ১৮০ রান। কিন্তু ঘটনা অন্যরকমও হতে পারতো। ম্যাচে পঞ্চম ওভার। দারুণ ফর্মে থাকা রহিত শর্মার তখন ৯ রানে ব্যাট করছেন। মোস্তাফিজুর রহমানের শর্ট বলে বড় শট খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে তুলে দেন। বেশ কিছু দৌড়ে আসলেও বল হাতেই পড়েছিল তামিম ইকবালের। কিন্তু তা রাখতে পারেননি টাইগারদের অন্যতম সেরা এ ফিল্ডার। তামিমের দেয়া লাইফ পেয়ে বাংলাদেশি বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান রহিত। তুলে নেন বিশ্বকাপের চলতি আসরের চতুর্থ শতক। আর এতে করে রহিত ছুঁয়ে ফেলেছেন বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ডও। ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তী কুমার সাঙ্গাকারা চারটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। রোহিতের সেঞ্চুরিও এখন চারটি।
রহিত বিশ্বকাপের চলতি আসরের সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যাটসম্যানও। এখন পর্যন্ত তিনি পাঁচটি লাইফ পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১ রানে লাইফ পেয়ে ১২২ রানে অপরাজিত ছিলেন রহিত শর্মা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ রানে তার ক্যাচ ছেড়ে দেয়ার পর ৫৭ রান করেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ রানে লাইফ পাওয়া রহিত করেন ১০২। বাংলাদেশের বিপক্ষেও লাইফটাও শতভাগ কাজে লাগালেন তিনি। চলতি আসরে রহিত একাই নয়, ক্রিস গেইলই পেয়েছেন ৫টি লাইফ।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ভারতকে বড় জুটি গড়তে দেয়নি টাইগার বোলরা। ২৬ রানে বিরাট কোহলি মোস্তাফিজের শিকার হওয়ার পর হার্দিক পান্ডিয়াকে ফেরান কোন রান করার আগেই। অর্ধশতক থেকে ২ রান বাকি থাকতে রিশভ পান্থকে ফেরান সাকিব।
শেষ ওভারে তিন উইকেট নেয়া মোস্তাফিজ ম্যাচে মোট ৫টি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া একটি করে উইকেট তুলে নেন সাকিব, রুবেল এবং সৌম্য সরকার।
স্কোর:
ভারত ৩১৪/৯ (৫০)
লোকেশ রাহুল ৭৭ (৯২)
রোহিত শর্মা ১০৪ (৯২)
বিরাট কোহলি ২৬ (২৭)
রিশভ পান্থ ৪৮ (৪১)
হার্দিক পান্ডিয়া ০ (২)
এমএস ধোনি ৩৫ (৩৩)
দিনেশ কার্তিক ৮ (৯)
ভুবনেশ্বর কুমার ১ (২)
মোহাম্মদ সামী ০* (০)
বোলার
মাশরাফি ৫-০-৩৬-০
সাইফুদ্দিন ৭-০-৫৯-০
মোস্তাফিজ ১০-১-৫৯-১
সাকিব ১০-০-৪১-১
মোসাদ্দেক ৪-০-৩২-০
রুবেল ৮-০-৪৮-১
সৌম্য ৬-০-৩৩-১
টার্গেট ৩১৫।
বাংলাদেশ ২৮৬/১০ (৪৮)
তামিম ইকবাল ২২ (৩১)
সৌম্য সরকার ৩৩ (৩৮)
সাকিব আল হাসান ৬৬ (৭৪)
মুশফিকুর রহিম ২৪ (২৩)
লিটন দাস ২২ (২৪)
মোসাদ্দেক হোসেন ৩ (৭)
সাব্বির রহমান (৩৬)
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৫১* (৩৮)
মাশরাফি বিন মুর্তজা ৮ (৫)
রুবেল হোসেন ৯ (১১)
মোস্তাফিজুর ০ (১)
বোলার
ভুবনেশ্বর কুমার ৯-০-৫১-১
জসপ্রিত বুমরাহ ১০-১-৫৫-৪
মোহাম্মদ সামী ৯-০-৬৮-১
জুজবেন্দ্র চাহাল ১০-০-৫০-১
হার্দিক পান্ডিয়া ১০-০-৬০-৩
ভারত ২৮ রানে জয়ী।