পৌরবাসীর আরও অনেক পাওনা আছে: যশোর পৌরসভার মেয়র
পৌরবাসীর আরও অনেক পাওনা আছে: যশোর পৌরসভার মেয়র |
যশোর পৌরসভার যাত্রা শুরু ১৮৬৪ সালে। দেড়শ' বছরের পুরনো এই পৌরসভার আয়তন ১৪ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী দুই লাখ ৮৬ হাজার ১৬৩ জন।
মোট ভোটার এক লাখ ৪১ হাজার ৩১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৯ হাজার ৫০৭ জন ও নারী ৭১ হাজার ৮০৩ জন। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা এটি। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন যশোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এই সাড়ে তিন বছরে মেয়র রেন্টু অনেক নন্দিত উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। তারপরও রয়ে গেছে অনেক সমস্যা।
ডাস্টবিন সংকট, ফুটপাত দখল, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, গাড়ি পার্কিংয়ে নৈরাজ্য, অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, মাদক, সন্ত্রাস, গণশৌচাগার সংকট, বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব-এ ধরনের অনেক সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। দেড়শ' বছরের পৌরসভাটি এখনও সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়নি। বাড়েনি পৌরসভার পরিধিও। এ নিয়ে রয়েছে পৌরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ।
দায়িত্ব পালনকালে নিজের সফলতা ও ব্যর্থতার কথা বলতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি বলেছেন, 'সাড়ে তিন বছরের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।
যেমন-রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, বিনোদনের ব্যবস্থা, ফুটপাত, জলাবদ্ধতা দূর করা, সড়ক বাতি, যানজট নিরসন, স্যানিটেন ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। পৌরসভার মধ্যে ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছি। ইজিবাইককে সিস্টেমের মধ্যে এনেছি। ড্রেন করেছি। শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। অন্ধকার ছিল শহর আলোকিত করেছি। রাতেই বেলা নিঃসঙ্কোচে ঘুরে বেড়ানো যায়। দেখতেও খুব ভালো লাগে। অনেক কাজই গত সাড়ে তিন বছরে করেছি-যার মূল্যায়ন নগরবাসীই করবে। তবে আমাদের ব্যর্থতা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত খুব কম লোকেই বাড়িয়েছেন।'
নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন-জানতে চাইলে মেয়র বলেন, 'ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির শতভাগ পূরণ করেছি। প্রতিশ্রুতির বাইরেও অনেক কাজ করছি। যেমন সুইমিংপুল, শহীদ মিনারের প্রতিশ্রুতিতে ছিল না। তাও করেছি।'
অভিযোগ আছে উন্নয়ন কাজের জন্য টেবিলে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? এই প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'আমাদের পৌরসভায় দুর্নীতি নেই বললেই চলে। পৌরসভায় ব্যাংকের বুথ চালু করা হয়েছে।
এখানে সব টাকার লেনদেন হচ্ছে। দুর্নীতি তো হয় অর্থ লেনদেনে। সেটি বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। তারপরও যদি কোথাও কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকে, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শাস্তি দেয়া হয়েছে।' ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার, ফুটপাত ও খাসজমি দখলমুক্ত করার ব্যাপারে মেয়র বলেন, 'জলাবদ্ধতা নিরসনে মুক্তিশ্বেরী নদীর সঙ্গে সাড়ে ৫ কিলোমিটার খাল দখলমুক্ত করে তা খনন করা হয়েছে। এখন আর শহরে জলাবদ্ধতা নেই। শহরের পুরনো পৌরসভা, আরএন রোডের নতুন বাজার, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দুই পাশ, বিমান অফিস মোড়, ঘোপ জেলরোডের পাশে, খালধার রোড ও নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়া রোডের মোট সাতটি স্থানে দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। কোথাও জলাবদ্ধতা নেই। জলাবদ্ধতার কোনো অভিযোগ পাই না। তবে হঠাৎ করে ভারি বৃষ্টি হলে হয়তো পানি সরতে ৫-১০ মিনিট দেরি হয়।'
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, যৌন হয়রানির মতো অপরাধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এ যুদ্ধে কতটা সফল হয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবাজমুক্ত সুন্দর যশোর গড়তে চাই।
সেই প্রত্যয়ের অংশ হিসেবে গোটা শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছি। কোথাও কেউ অপরাধ করলে ধরা পড়বে। মাদকের ব্যাপারে আমরা সব সময় সোচ্চার।
মাদক নির্মূল করতে হলে পুলিশের জোরালো ভূমিকা দরকার। মাদক নির্মূলে প্রশাসনকে সব সময় সহযোগিতা করছি।' আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'পৌরসভার সেবায় নাগরিকরা সন্তুষ্ট। তাদের ট্যাক্সের বিনিময়ে পরিচ্ছন্ন শহর, সুন্দর সড়ক, সড়ক বাতি, সুপেয় পানি, জলাবদ্ধতা দূর ও বিনোদনের ব্যবস্থা করেছি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। পৌরসভায় অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করছি। মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটির স্কুলে আগে পাসের হার ছিল খুবই কম। এখন পাসের হার শতভাগ। এছাড়াও সরকারি এমএম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজের উন্নয়নে আমরা এগিয়ে গেছি।
উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা দেখছি। মহিলা কলেজের ভেতরে ফুটপাত করে দিয়েছি।' মেয়র রেন্টু বলেন, 'পৌরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেও কাজ করছি। যশোর জেনারেল হাসপাতালের উন্নয়নে কাজ করছি। চার মাস ধরে সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তাদের জনবল সংকট আছে। পৌরসভা থেকে আমরা লোক দিয়েছি। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা, এসি, কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টার, ফ্যান, সরকারি ওষুধ মানসম্মত কিনা সেটি বুঝে নেয়ার ব্যবস্থা করেছি।'
আবার প্রার্থী হলে জনগণকে কী প্রতিশ্রুতি দেবেন-এই প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'প্রতিশ্রুতির শতভাগ পূরণ করেছি। তারপরও অনেক পাওনা বাকি আছে। অনেক এলাকায় রাস্তা, ড্রেনের কাজ বাকি আছে। সেগুলো করতে হবে। জনগণের জন্য আমার দরজা খোলা। সবাই অবাধে আমার কাছে আসতে পারে।'
C: .jugantor
No comments