আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫২ তম বিবাহ বার্ষিকী - Jashore24.com

শিরোনাম

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫২ তম বিবাহ বার্ষিকী

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫২ তম বিবাহ বার্ষিকী
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫২ তম বিবাহ বার্ষিকী 

১৯৬৭ সালের ১৭ ই নভেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বিজ্ঞানী মরহুম ডঃ এম এ ওয়াজেদ আলী মিয়া। প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। স্নাতকের ছাত্রী থাকা অবস্থাতেই ১৯৬৭ সাথে তাঁর বিয়ে হয়। 




অপরদিকে ডঃ এম.এ ওয়াজেদ মিয়া ডাক নাম সুধা মিয়া। তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল কাদের মিয়া এবং মাতা ময়েজুন্নেসা। তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। মানসম্মত লেখাপড়ার জন্য ওয়াজেদ মিয়াকে রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকেই তিনি ডিসটিনকশনসহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন তিনি। এরপর ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করেন এবং ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। 

ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর, দেশে ফিরে একই বছর ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে এই দম্পতির দু'টি সন্তান রয়েছে। 

ডঃ এম.এ ওয়াজেদ মিয়া দীর্ঘদিন কিডনি সমস্যাসহ হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ২০০৯ সালের ৯ই মে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।





ওয়াজেদ মিয়ার শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় চক করিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর পীরগঞ্জ হাইস্কুলে। ১৯৫৬ সালে রংপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্মাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবছরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের 'ডিপেস্নামা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স' সম্পন্ন শেষে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন মেধাবী ছাত্র ওয়াজেদ মিয়া। পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। 

১৯৬১ সালের প্রথম দিকে ছাত্রলীগে যোগ দেন তিনি। ১৯৬১-১৯৬২ শিক্ষা বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রম্নয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাৰাত ঘটে এবং ওই বছরেই জেনারেল আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেফতারও হন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ, তখন তার ঘনিষ্ঠ সহকারী পীরগঞ্জের সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমানের অভিভাবকত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. ওয়াজেদ মিয়ার বিয়ে হয়। 

যেভাবে হলো বিয়ে: লন্ডন থেকে পিএইচডি শেষ করে ওয়াজেদ মিয়া ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে যোগ দেন আণবিক শক্তি কেন্দ্রে। কিছুদিন পরে রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তার গুলশানের বাসায় তাকে ডেকে নিয়ে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলেন। জানতে চান, অতি তাড়াতাড়ি তিনি বিয়ে করবেন কিনা। ওয়াজেদ মিয়া বলেন, তিন মাসের মধ্যে বিয়ে করতে চাই। মতিউর রহমান জানতে চান, কেমন পাত্রী তার পছন্দ। ওয়াজেদ মিয়া বলেন, কোটিপতির কন্যা কিংবা আপস্টার্ট মেয়ে হওয়া চলবে না। মেয়েকে অবশ্য সুরুচিসম্পন্ন, অমায়িক ও সদাচার স্বভাবের হতে হবে। এর ১০ দিন পর মতিউর রহমান আবার তাকে বাসায় ডেকে নেন। জিজ্ঞেস করেন, তুমি মুজিব ভাইয়ের মেয়ে হাসিনাকে দেখেছো? আমার মনে হয়, ওর সঙ্গে তোমাকে খুব মানাবে। ওয়াজেদ মিয়া বলেন, সে কি করে সম্ভব? শেখ সাহেবকে তো আমি ভাই বলে ডাকি। মতিউর রহমান বলেন, সেটা রাজনৈতিক সম্পর্ক। দু'দিন পর ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মতিউর রহমানের বাসায় আসেন বেগম মুজিব, শেখ কামাল, শেখ শহীদ ও একজন মুরব্বি। এর অল্প কিছুক্ষন পরে হাসিনা সেখানে আসেন। তাকে ওয়াজেদ মিয়া জিজ্ঞেস করেন, তুমি হাসিনা না? হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, আমি হাসিনা। তারপর সেখান থেকে চলে যান। এরপর বিয়ের প্রস্তাবে ওয়াজেদ মিয়া সম্মতি জানান। বেগম মুজিব জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলগেটে শেখ সাহেবের সঙ্গে আলাপ করেছেন। 

তিনি ওইদিনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বিশেষভাবে বলেছেন। তার পরামর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেদিনই বিয়ের কথা পাকা করতে সম্মত হন ওয়াজেদ মিয়া। এরপর হাসিনার হাতে আংটি পরিয়ে দেন তিনি। ওই আংটি সেদিন দুপুরে বায়তুল মোকাররম থেকে কিনেছিলেন ওয়াজেদ মিয়া। পরিয়ে দেয়ার সময় দেখা যায়, আংটিটি হাসিনার আঙুলের মাপের চেয়ে বেশ বড়। এরপর ওয়াজেদ মিয়ার আঙুলে আংটি পরিয়ে দিয়ে দোয়া করেন বেগম মুজিব। 

পরদিন ১৭ নভেম্বর বিয়ের আক্ত (রুসমত) সম্পন্ন হয়। সেদিন ওয়াজেদ মিয়া স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে একটি লাল-গোলাপি শাড়ি, মাঝারি আকারের ক্রিম রঙের নতুন ডিজাইনের একটি স্যুটকেস ও এক জোড়া স্যান্ডেল কিনেছিলেন। তার সঙ্গে কোন টাকা ছিল না। 

দাম পরিশোধ করেছিলেন বেগম মতিউর রহমান। সেদিন রাত সাড়ে ৮টায় জনাব ও বেগম মতিউর রহমান ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে যান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসায়। সেখানে উপস্খিত ছিলেন শেখ সাহেবের ছোট বোন জামাই তৎকালীন সরকারের সিনিয়র সেকশন অফিসার এটিএম সৈয়দ হোসেন ও অন্যান্য মুরব্বি। সেদিনেই বিয়ে পড়ানো ও কাবিননামা স্বাক্ষর করা হবে বলে ওয়াজেদ মিয়াকে জানানো হয়। সে রাতটি ছিল শবে বরাত। কাবিনপত্রে ২৫ হাজার টাকা বিয়ের দেনমোহরানা সাব্যস্ত করা হয়। বউ দেখার জন্য উপর তলায় যাওয়ার মুখে শেখ শহীদ একটি বড় তাজা লাল গোলাপ দেন ওয়াজেদ মিয়াকে। 

বাসরঘরে বসেছিলেন বউ বেশে হাসিনা, এটিএম সৈয়দ হোসেনের বড় মেয়ে শেলী ও ছোট বোন রেহানা। ওয়াজেদ মিয়াকে দেখেই রেহানা বলেন, দুলাভাই খালি হাতে এসেছেন বউ দেখতে। বউ দেখতে দেবো না। পরদিন বিকালে জেলগেটের কাছে একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ওয়াজেদ মিয়ার দেখা হয়। তিনি জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন, তার হাতে একটি রোলেক্স ঘড়ি পরিয়ে দেন। ওই ঘড়ি ও বিয়েতে হাসিনাকে দেয়া শাড়ি এবং স্যুটকেস ড. ওয়াজেদ সযতে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। সেদিন বাসায় ফিরে বেগম মুজিব তাকে বলেন, তুমি আমার বড় ছেলের মতো শেখ সাহেব অনুমতি দিয়েছেন। 

যথাসম্ভব তুমি আমাদের সঙ্গে থাকবে। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যান তিনি। 

ওয়াজেদ-হাসিনা দম্পত্তির বড় সন্তান কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই। একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন মনোবিজ্ঞানী। তিনি কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে।

No comments

close