তারা আজ কোথায়?
তারা আজ কোথায়? |
বাংলাদেশে এক শ্রেণীর সুশীল সমাজ আছে, যারা যেকোনো সময়ে তাদের বিবেকের দংশনে চিৎকার করে ওঠেন। বিশেষ করে সরকারের বিরুদ্ধে কোনোকিছু পেলেই তারা হৈ করে ওঠেন, আর্তনাদ করেন এবং জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের কান্না, আহাজারি এমন পর্যায়ে চলে যেন দেখে মনে হয় দেশটা রসাতলে চলে গেলো।
কিন্তু কোনো বিপদ-আপদের মধ্যে তাদের দুর্গত মানুষের পাশে কখনো পাওয়া যায় না। তারা সবসময় সরকারের সমালোচনা করেন, সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির নানা গল্প তুলে ধরেন। সত্য-মিথ্যা বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরি করে বিদেশীদের কাছে দিয়ে ডলারও কামান। কিন্তু এই কোনো দুর্যোগে তাদের আর পাওয়া যায় না।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে করোনা দুর্যোগ চলছে। আর এই করোনা দুর্যোগে এই সমস্ত সুশীল জাতির বিবেকরা যেন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তাদের টিকিটিও এখন দেখা যাচ্ছে না। এদের কয়েকজনকে আসুন আমরা চিনে নিই, যারা দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকেন না-
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হলো, তখন তিনি এক কলাম লিখেই খালাস। সেই কলামে তিনি যেগুলো লিখলেন, সেগুলো খুবই গতানুগতিক, যে কথাগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তারপরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোথায় গেলেন? যারা দরিদ্র দিনমজুর, যারা দিন আনে দিন খায়, যারা এখন প্রায় অভুক্ত অবস্থায় চলে গেছেন, তাদের জন্য কি তিনি একদিন কোনোরকম খাবারের ব্যবস্থা করেছেন? অন্তত ১০ জন মানুষকে কি ড. মুহাম্মদ ইউনূস খাবার দিয়েছেন? এমন তথ্য
আমাদের কাছে নেই।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশের এক ছিদ্রান্বেষী অর্থনীতিবিদ। তিনি সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর সম্মানিত ফেলো। তার একমাত্র কাজ হলো আমাদের অর্থনীতিতে কি ব্যর্থতা, কি দুর্বলতা আছে সেগুলো খতিয়ে দেখা এবং নেতিবাচক কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে সবাইকে হতাশাগ্রস্ত হরে ফেলা। যদিও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কখনো সত্য প্রমাণিত হয়নি। সেই ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এখন নীরব। দেশে করোনা সংক্রমণের পরে তাকে কোনো দৃশ্যপটেই দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তিনি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে জাতিকে কোনো জ্ঞানও দিচ্ছেন না। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কি জাতিকে কোনো বাণী বা পরামর্শ দেবেন, কিংবা সরকারকে কোনো পরামর্শ দেবেন?
সুলতানা কামাল: সুলতানা কামাল একজন মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি আর দশজন সুশীল থেকে কিছুটা আলাদা। কিন্তু সরকারের সমালোচনা বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তার কথাবার্তা প্রায়ই শোনা যেতো। কিন্তু এই করোনা সংকটের সময় আমরা সুলতানা কামালকে কোথাও দেখতে পেলাম না। কেন তিনি নেই সেই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: ড. বদিউল আলম মজুমদার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর নির্বাহী পরিচালক। তার হাঙ্গার প্রজেক্ট নামেও একটি এনজিও রয়েছে, যেটা দিয়ে তিনি বিদেশ থেকে অর্থ নিয়ে আসেন। এই ড. বদিউল আলম মজুমদারের কি অবস্থা? তিনি কি দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাড়িয়েছেন? আমরা জানি যে সারাদেশে সুজনের কার্যক্রম রয়েছে। সারাদেশে তাদের যে ভলান্টিয়াররা রয়েছেন তারা কি দরিদ্রদের জন্য কিছু করেছেন? কোনো অর্থ সহায়তা বা দরিদ্রদের একবেলা খাওয়ানো? বা মানুষ যেন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকে সেজন্য সামাজিক সচেতনতা তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের কি ন্যুনতম অবদান রয়েছে?
হাফিজ উদ্দিন: সাবেক আমলা হাফিজ উদ্দিন প্রায়ই বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন এবং সরকারের সমালোচনা করেন। সরকারের নীতিকৌশলের নানারকম ব্যর্থতা তুলে ধরেন এবং নির্মম ভাষায় সরকারকে আক্রমণ করেন। তিনিই দাবি করেন যে তিনি যা বলেন তার সবিই জনগণের স্বার্থে। কারণ তিনি যেন জনগণের বিবেক, জনগণের কণ্ঠস্বর। কিন্তু করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগের সময়ে এই জাতির বিবেক কোথায়? তাকে আমরা কোথাও দেখিনি এখনো, জাতির কোনো কথা বলতেও শুনিনি। এমনকি তিনি সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বানটুকুও জানাননি।
আমাদের এই জাতির বিবেকরা দুর্যোগের সময়ে কেন ঘুমিয়ে থাকবেন, কেন তারা আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে যান, সেই প্রশ্নের উত্তর তাদেররকেই দিতে হবে। কারণ যেকোনো বিষয়ে সমালোচনা করা অনেক সহজ, কিন্তু সমাধান বাতলে দেওয়া অনেক কঠিন কাজ।
উৎস: গোনি নিউজ
No comments