রোগীরা অন্ধকারে : একমাসে ৪৭ নমুনার মধ্যে ৬টির রিপোর্ট এসেছে যশোরে
রোগীরা অন্ধকারে : একমাসে ৪৭ নমুনার মধ্যে ৬টির রিপোর্ট এসেছে যশোরে |
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হলেও যশোরের রোগীরা সঠিক সময়ে রিপোর্ট পাচ্ছেন না। ফলে ভুক্তভোগীরা জানতে পারছেন না তাদের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আছে কি-না। আজ থেকে খুলনায় এ পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার একদিনে ১২টি (স্যাম্বল) নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা আইইডিসিআরএ পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ মার্চ থেকে প্রায় একমাসে করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছিল ৪৭টি। এর ভেতর ৬টির রিপোর্ট যশোর সিভিল সার্জনের দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। যার ভেতর ৬টি রিপোর্ট নেগেটিভ বা করোনাবাইরাসমুক্ত বলে জানানো হয়েছে। বাকি ৪১টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যশোর এসে পৌঁছায়নি। নমুনা সংগ্রহের পর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ থাকলেও অনেক তা দেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীনের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, সারাদেশের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে আইইডিসিআর-এ। এখন বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা হওয়ায় নমুনা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। যে জন্য রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে।
অন্যদিকে, সিভিল সার্জন অফিসের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ডা. মো. মাশহুরুল হক জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার হতে খুলনায় করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। সেখানে পরীক্ষা হলে ৪ ঘন্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
এদিকে, গতকাল বেনাপোল সীমান্ত হয়ে দেশে ফেরা ৪৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও হাঁড়ভাঙা রোগীকে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, গতকাল ভারত থেকে ৪৪ জন বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে দেশে প্রবেশ করেন। তাদের সকলকে হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এদের ভেতর ২ জনকে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ৩৯ জনকে বেনাপোল পৌর কমিউনিটি সেন্টারের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ২ জনকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। সরকারি নির্দেশে যারা বিদেশ ফেরত তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পাঠানো একজন নারী। তিনি ৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। তার বাড়ি ঢাকার উত্তরায়। অপরজন বৃদ্ধ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন। এতে তার কোমরের হাঁড় ভেঙে যায়। ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ওই বৃদ্ধের বাড়ি পাবনা জেলায়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বেনাপোল থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় স্থানান্তর করেন। রোগীদের ইচ্ছানুযায়ী যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে তাদের স্থানান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন নয়। বিদেশ হতে ফেরত আসা সকলকে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য সরকারি নির্দেশ রয়েছে। সে মেতাবেক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে, যশোরের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর জানিয়েছেন, গত রোববার কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে দু'জনকে নেয়া হয়েছে। তারা পিতা ও পুত্র। ছেলে হাঁচি-কাঁশি, জ্বর, দেখে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। পিতা সাথে থাকার কারণে তাকেও কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের অবস্থা ভালো। যশোর জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়ায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক সতর্কতা শুরু হয়েছে। কর্মকর্তাগণ জনগণকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এর আগে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় এ জেলায় ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গত ১০ মার্চ থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় ২ হাজার ৪শ' ৮৭ জনকে। তাদের মধ্যে ২ হাজার ১শ' ৫৮ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
সূএ: লোকসমাজ
No comments