যশোরে বিষাক্ত মদপানে গত ৫দিনে মৃত্যু ১৫ জন - Jashore24.com

শিরোনাম

যশোরে বিষাক্ত মদপানে গত ৫দিনে মৃত্যু ১৫ জন

যশোরে বিষাক্ত মদপানে গত ৫দিনে মৃত্যু ১৫ জন
যশোরে বিষাক্ত মদপানে গত ৫দিনে মৃত্যু ১৫ জন

যশোরে বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। গত পাচঁ দিনে জেলা সদরসহ তিনটি উপজেলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে অ্যালকোহল পানে এমন খবর মিলেছে পরিবারের সদস্য, হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে।

ইতোমধ্যে যশোর শহরের অবৈধ দেশি মদ ব্যবসায়ী এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মৃত দুই ব্যক্তির স্ত্রী ও পুলিশ বাদি হয়ে পাঁচটি মামলা করেছে। ৫টি মামলাই আসামি করা হয়েছে যশোর মাড়ুয়াড়ি মন্দির সংলগ্ন পতিতাপল্লীর সামনে মদ বিক্রেতা মাহমুদুল হাসানকে (৫২)। এছাড়া এই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় সাজু নাম অপর একজনকে আসামি করা হয়েছে। সাজু বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে। হাসান, সাজুসহ মোট ৪জন আটক আছে পুলিশের কাছে। কিন্তু পুলিশ হাসান ও সাজুর আটকের কথা স্বীকার করেছে। হাসানের দোকানের কর্মচারি খোকন মাষ্টার ও বাবু নামে অপর দুইজন আটক হলেও পুলিশ তাদের আটকের কথা স্বীকার করেনি।

মামলার যারা বাদি হয়েছেন তারা হলেন, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের শরিফ উদ্দিন মুন্নার স্ত্রী হিরা বেগম, শহরতলীর শেখহাটি কালীতলার খন্দকার আরশাদ আলীর ছেলে খন্দকার সুজন হোসেন, ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গা এলাকার ফজলুর রহমান চুক্কির স্ত্রী সাথী বেগম, কোতয়ালি থানার এসআই হারুর অর রশিদ ও সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কাইয়ুম মুন্সি।

এর মধ্যে তিনটিতে মদ খাইয়ে মানুষ হত্যা, আর দুটি অবৈধ মদ বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে। মোতালেব নামে আরও এক অবৈধ মদ ব্যবসায়ীকে খুঁজছে পুলিশ।

বহুল আলোচিত এই হাসান ও মোতালেবের দোকানের বিষাক্ত বা ভেজাল মদপানে এই পর্যন্ত জনাদশেকের মৃত্যু হয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে যশোর শহর, শহরতলী ছাড়াও চৌগাছা ও মণিরামপুর উপজেলার বাসিন্দারা রয়েছেন। ইতিমধ্যে আটক হাসানের দোকানে তল্লাশি করে সেখান থেকে মদের স্যাম্পল উদ্ধার করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভেজাল বা বিষাক্ত মদপানে রোববার ২৬ এপ্রিল নতুন করে যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে তারা শহরের রেলগেট চোরমারা দীঘির পাড় ও বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে একজন বিকাশ সাহানি (৩৮); অন্যজন ওজিয়ার ওরফে ওলিয়ার। বিকাশ শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার দামোদর সাহানির ছেলে। আর ওলিয়ার শহরের রেলগেট চোরমারা দীঘির পাড়ের মৃত কুরবান গাজীর ছেলে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, রোববার সকাল দশটা আট মিনিটে বমি, মাথা ঘোরাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওলিয়ার। আসলে তিনি অ্যালকোহল পয়জনিংয়ের শিকার। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওলিয়ারকে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন কর্তব্যরত ডাক্তার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রিপোর্ট আসার পরে জরুরি বিভাগের খাতায় তথ্য সংশোধন করে 'অ্যালকোহল পয়জনিং' লেখা হয় বলেও জানান এই ব্রাদার।

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক রুবেল হাওলাদার বলেন, 'বিকাশ সাহানি রাত দুইটা ২৫ মিনিটে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হতে আসে। তখন আমার সন্দেহ হয়েছিল। রোগীর কেস হিস্ট্রি জেনে চিকিৎসা দেওয়ার স্বার্থে বিকাশের পরিবারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তারা জানায়, সে মদ খেয়েছে। ভোর চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাশ মারা যায়।'

পান করা অ্যালকোহলে পয়জন থাকার কারণে বিকাশের মৃত্যু হয় বলে মনে করছেন ডাক্তার রুবেল।

এ দুইজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোতয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আগে থেকেই পুলিশ বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।

অপরদিকে চৌগাছায় দুই ট্রাকচালকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন মারা যান। রাঙি (৪৫) নামে এই ব্যক্তি একজন আদিবাসী। বংশপরম্পরায় তারা মদ সেবনে অভ্যস্ত।

এর আগে এদিন বিকেলে খলিলুর রহমান নামে (৩৭) এক ট্রাকচালকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের ধারণা, বিষাক্ত মদপানে এই দুই ট্রাকচালক মারা গেছেন। পুলিশের সন্দেহও তেমনই। যদিও থানার প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা এই বিষয়ে খোলসা করে কিছু বলেননি।

এছাড়া শরিফুল ইসলাম (৩৬) নামে আরেক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনিও মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। তার বাড়িতে শনিবার রাতেই জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন।
শনিবার ২৫ এপ্রিল মৃত্যু হয়েছে চার জনের। তারা হচ্ছেন যশোর সদর উপজেলার শেখহাটির আরশাদ আলীর ছেলে শাহিন হোসেন (৩৫), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের খিতিবদিয়ার শাহজাহান সরদারের ছেলে ইনামুল হোসেন (৩৯), ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল গ্রামের সাহেব আলী (৬৫) ও মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের তপন হালদার (৪০)। তাদের সকলের যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার ২৩ এপ্রিল রাত ও শুক্রবার ২৪এপ্রিল মৃত্যু হয় মণিরামপুর উপজেলার মদরপুর গ্রামেরআব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোমিন (৪৮), একই গ্রামের মুক্তার হোসেন (৪৭), যশোর শহরের গরীব শাহ মাজার এলাকার শরিফ উদ্দিন ওরফে মনি বাবু (৪৫), ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবুর (৪৬), বেজপাড়ার নান্টু (৩৫), ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান চুক্কি (৫০), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান (৪৫)।

এদিকে, এ সব মৃত্যুর ঘটনায় বহুল আলোচিত ভেজাল ও বিষাক্ত মদের কারবারি মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মোট পাঁচটি মামলা (নম্বর ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬ ও ৫০, তারিখ ২৫.৪.২০) হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় মদ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্য দুটি মামলায় অবৈধভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, একটি মামলার বাদী যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গা এলাকার মৃত ফজলুর রহমান চুটকির স্ত্রী সাথী বেগম (৪০)। অন্য দুটি মাদক মামলার বাদী থানার এসআই কাইয়ুম মুন্সি ও এসআই হারুনর রশিদ।

কোতয়ালি থানার ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসনিম আলম মদের কারবারি হাসানের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে তিনটি হত্যার, দুটি মাদকের।

কোতয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, হাসানকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। অপরদিকে মোতালেব নামে আরও একজন অবৈধ ও ভেজার মদ ব্যবসায়ীকে খুজছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও তারা দীর্ঘদিন ধরে মদের কারবার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। শহরের কেন্দ্রস্থলে কোতয়ালি থানা ও মাড়োয়ারি মন্দির-সংলগ্ন পতিতালয়ের গা-ঘেঁষে হাসানের দোকান। মোতালেবের দোকান পাশের বাবুবাজার পতিতালয় এলাকায়।

অভিযোগ আছে, হাসান ও মোতালেবসহ বেশ কয়েক ব্যক্তি ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে মদ বেচা-কেনা করলেও কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখে না। ওপেন সিক্রেট এই কারবার নাকি কর্তৃপক্ষকে 'ম্যানেজ' করেই চালানো হয়।

সূএ: ওয়ান নিউজ বিডি

No comments

close