একই স্যাম্পল বিভিন্ন ল্যাবে ভিন্ন রেজাল্ট দেয় যে কারণে
একই স্যাম্পল বিভিন্ন ল্যাবে ভিন্ন রেজাল্ট দেয় যে কারণে |
সেলিনা আক্তার
গত কয়েকদিনে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পজিটিভ রেজাল্ট দেওয়া স্যাম্পলগুলো আইইডিসিআর-এ নেগেটিভ আসায় আমাদের মনে দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আমরা সন্দেহ পোষণ করছি যে, আসলেই স্যাম্পলগুলো ঠিকভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে কি-না। বিষয়টির কোনো ব্যাখ্যা কুষ্টিয়া থেকে দেওয়া না হলেও যশোর থেকে প্রথম থেকেই নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে অভিযোগ আসছিল। সমসাময়িক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করে বরং কোভিড ১৯ এর বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করি। এই পরীক্ষার সম্ভাব্য ভুলগুলো কী হতে পারে সেটা জানলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আরটি পিসিআর-এর মাধ্যমে কোভিড-১৯-এর নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এটিই এই ভাইরাস পরীক্ষার জন্য গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড। নমুনা হিসাবে ন্যাসাল সোয়াব ও থ্রোট সোয়াব একত্রে একটি টিউবে সংগ্রহ করতে হয়। সোয়াবগুলো সাধারণত ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়ায় (ভিটিএম) রাখা হয়। আরএনএ ভাইরাস (যেমন কোভিড-১৯)- এর ক্ষেত্রে আরএনএ ল্যাটার সল্যুশন ব্যবহার করেন অনেকে। এই সল্যুশনগুলোর সরবরাহ না থাকায় দেশের অনেক জায়গাতেই নরমাল স্যালাইন ব্যবহার হচ্ছে। নমুনা যদি অল্প সময়ের মধ্যে ল্যাবে পৌঁছায়, সেক্ষেত্রে সমস্যা নাও হতে পারে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা বা তার চাইতে বেশি সময় থাকলে ভাইরাসের আরএনএ নষ্ট হয়ে যেতে পারে; যা ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট দেবে। সংগ্রহের পর থেকেই নমুনাগুলোর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রাখা জরুরি। তাপমাত্রা ঠিকমতো বজায় না রাখলেও একই ঘটনা ঘটবে।
নমুনা সংগ্রহ করতে একেক জায়গায় একেক ধরনের টিউব ব্যবহার হচ্ছে। কোথাও সোয়াব স্টিকের যে কভার আছে, তার মধ্যেই নমুনা দেওয়া হচ্ছে, কোথাওবা ব্লাড কালেকশনের টিউব দেওয়া হচ্ছে। এ সকল টিউবে এন্টিকয়াগুলেন্ট থাকে; যার কোনো কোনোটি পিসিআর-কে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এবার আসি আরটি পিসিআর কিটের বিষয়ে। নমুনার মতো এই রিএজেন্টও তাপমাত্রা সংবেদনশীল। আমদানি থেকে শুরু করে ল্যাব পর্যন্ত পৌঁছাতে সংরক্ষণ সম্পর্কিত কিটের নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। অন্যথায় পুরো ব্যাচ ধরে ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসতে পারে। পিসিআর মেশিনের ভুল হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই একই নমুনা একই ল্যাবে দুবার বা তিনবার করে দেখলে যদি কাছাকাছি ফলাফল না আসে, তাহলে বোঝা যাবে কিটের কোয়ালিটি ভালো নাই।
যেকোনো জিনের পিসিআর একটানা কোনো ল্যাবে করলে ভাইরাসের সিডিএনএ কপি বাতাসে ও টেবিলে থেকে যেতে পারে। তা থেকেও ফলস পজিটিভ ফলাফল আসতে পারে, যদিও কন্ট্রোল নেগেটিভ দেখে তা সহজেই বিচার করা যায়। তাই, ল্যাবগুলো নির্দিষ্ট সময় চলার পর নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালাতে হবে ও কন্ট্রোল পিসিআর চালিয়ে মেশিন ও ল্যাবের পরিবেশ ভ্যালিডেট করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে, একই নমুনা দুটি ভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা করলে ফলাফল একই আসার কথা, যদি না নমুনা সংগ্রহ থেকে টেস্ট করা পর্যন্ত একই সময় এবং একই পরিবেশ বজায় রাখা না যায়।
লেখক : সেলিনা আক্তার পিএইচডি, সহযোগী অধ্যাপক, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, যবিপ্রবি
সূএ: সুবর্ণভূমি
No comments