করোনামুক্ত থেকে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে যশোর পুলিশ
করোনামুক্ত থেকে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে যশোর পুলিশ |
মাঠপর্যায়ে কেমন আছেন, কীভাবে তারা করোনা মোকাবেলায় নিয়োজিত আছেন-এসব বিষয়ে সার্বিক দিক তুলে ধরেছেন যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
একান্ত সাক্ষাৎকারে পুলিশ সুপার বলেন, যশোর পুলিশ করোনামুক্ত থেকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি পুলিশ সদস্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আগেই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। প্রথমে পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যদের তিন ভাগে ভাগ করে নিয়ে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আলাদা করে ফেলি। যাতে একটি গ্রুপ আক্রান্ত হলে বিকল্প গ্রুপ দিয়ে কাজ করাতে পারি।
পরবর্তী সময়ে প্রত্যেকটি থানা, ফাঁড়ি, ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যদের তিন ভাগে ভাগ করেছি। যশোর পুলিশের এ মডেল আইডিয়া পরবর্তী সময়ে খুলনা রেঞ্জের অন্যান্য জেলা পুলিশ বিভাগে অনুসরণ করা হয়েছে। আমরাই প্রথম পুলিশ লাইন, থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পের প্রধান ফটকে
জীবাণুনাশক বুথ তৈরি করেছি। প্রত্যেকটি সদস্য যতবার প্রবেশ ও বের হয়েছেন, জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। এতে তারা জীবাণুমুক্ত হয়েছেন। প্রথম থেকেই প্রত্যেকটি পুলিশ সদস্যকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যশোর পুলিশ করোনামুক্ত আছে। আমার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই। দেশের ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
করোনা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসপি আশরাফ হোসেন বলেন, তিনটি চ্যালঞ্জ ছিল। প্রথমত, মানুষকে ঘরে রাখা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, করোনামুক্ত থেকে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে আসা মানুষকে ঘরে রাখা।
সচেতনতা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, প্রথম থেকেই আমরা মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু করি। জেলায় লক্ষাধিক লিফলেট, হ্যান্ডবিল বিতরণ করেছি। এরপর বিদেশ ফেরত মানুষকে চিহ্নিত করেছি। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বাড়ি লাল নিশানা টানিয়ে দিয়েছি।
এরপর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকে অনেকেই এলাকায় এসেছেন। তাদেরও তালিকা করেছি। এরপর স্থানীয় থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে সরবরাহ করেছি। তাদেরও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসা মানুষের তালিকা করে তাদেরও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছি।
জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনের সঙ্গে আমিও বাড়ি গিয়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছি। করোনা আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে তাদের বাড়ি গিয়ে আমরা যৌথ টিম কথা বলেছি। অনেকের বাড়িতে বাজার করে দিয়েছি। আমরা মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে রাখতে পেরেছি।
পুলিশের ত্রাণ তৎপরতা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, জেলা পুলিশ প্রথম থেকেই ত্রাণ তহবিল গঠন করেছে। এ পর্যন্ত ৬ সহস াধিক কর্মহীন শ্রমজীবী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যারা হাত পেতে খাবার চাইতে পারেন না, তাদের বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছি।
এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, বিউটিশিয়ান, ম্যাজিশিয়ান, হিজড়া, বেদে, পতিতালয়ের বাসিন্দাদের মাঝে খাবার, ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে হটলাইন সেবা চালু করেছি। সেখানে অসংখ্য ফোন পেয়েছি। নামের তালিকা করেছি। যাচাই করে তাদের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি। কেউ যাতে একাধিকবার না পায়, কিংবা বাদ না পড়ে সেটি দেখছি। ঈদুল ফিতরে ঈদ উপহার দেব।
জেলার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আশরাফ হোসেন বলেন, পরিসংখ্যান বলছে অপরাধ কমেছে। আগে যেখানে মাসে ৩৪০-৩৫০টি মামলা হতো, সেখানে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৬০টি মামলা হয়েছে। সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পুলিশ সুপার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপির প্রত্যেকটি নির্দেশনা দায়িত্ব মনে করে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। সরকারের প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। পুলিশ সদস্যরা দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত আছেন।
সূত্র: যুগান্তর
No comments